শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ ঢাকা, বাংলাদেশ
সংবাদ

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনা অফিসারের অভ্যুত্থান, নাকি হত্যাকাণ্ড?

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনা অফিসারের অভ্যুত্থান, নাকি হত্যাকাণ্ড?

ফাইল ছবি ।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের একদল অফিসারের গুলিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নির্মমভাবে নিহত হন। এই বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে সেই পুরনো সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়। জিয়া হত্যা সম্পর্কে সেই সময় এবং পরবর্তীকালে অনেক লেখালেখি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পরেও বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো এই যে, এই লেখালেখিগুলো কোনো সময়েই বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হয় না। দেখা যায়, প্রায় সব লেখকই নিজ নিজ দলীয় অথবা মতাদর্শগত দৃষ্টিকোণ থেকে লেখেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে দেখা যায়, অন্তত সেই আমলে এক শ্রেণীর লেখক এটিকে সামরিক অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু অন্যেরা এটাকে একটি হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন। সর্বোচ্চ আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে এবং যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে। কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন উঠেছে, যারা হত্যা করলো তারা তো সকলেই মেজর ছিলেন। তাদের তো ফাঁসি হয়েছে, যারা বিচারের আগেই দেশ ছেড়েছিলেন তাদেরও ফাঁসির রায় হয়েছে। তারা বিদেশে থাকায় সেই রায় কার্যকর হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে এই যে, যাদের ফাঁসি হয়েছে বা যাদের ফাঁসির রায় হয়েছে শুধুমাত্র তারাই কি এই বিয়োগান্ত ঘটনায় জড়িত ছিলেন? তাদের নেপথ্যে কি দেশি বা বিদেশি কোনো শক্তি ছিল না? এ ব্যাপারে কোনো তদন্ত হয়নি। বিচার তো পরের কথা।

জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারেও অনেকটা একই রকম ঘটনা ঘটেছে। আগেই বলেছি যে, এসম্পর্কে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু যেসব অফিসার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করে, শুধুমাত্র তারাই কি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী? চট্টগ্রামে আরেকটি ব্যতিক্রমী ঘটনা দেখা যায়। তখন চট্টগ্রাম গ্যারিসনের জিওসি ছিলেন মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর। পরবর্তীকালে দেখা যায় যে যত লেখালেখি হয়েছে তার অধিকাংশই একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা। ঐ সব লেখায় যত না জিয়া হত্যাকাণ্ড আলোচিত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি করে দেখানো হয়েছে যে, মেজর জেনারেল মঞ্জুর ঐ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। হত্যাকাণ্ডটি ঘটলো চট্টগ্রামে, কিন্তু সমস্ত ফোকাস নিবদ্ধ হলো ঢাকায়। অতীতে এসম্পর্কে যত লেখালেখি হয়েছে তার বেশকিছু পেপার ক্লিপিং আমার সংরক্ষণে রয়েছে। এই লেখাগুলোর অধিকাংশই আমার কাছে একপেশে মনে হয়েছে। দেখা যায় যে, ঐসব লেখায় পর্দার অন্তরালের একজনকে ভিলেন হিসেবে চিত্রিত করার রিপিটেড প্রচেষ্টা করা হয়েছে।

এই বিষয়টি নিয়ে লেখার ইচ্ছা মোটামুটি পরিত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু গত বইমেলায় একটি বইয়ের বিজ্ঞাপন দেখলাম। বইটির নাম, ‘দুই জেনারেলের হত্যাকাণ্ড : ১৯৮১-র ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান’। বইটি লিখেছেন জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী। তিনি তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ছিলেন। ভাবলাম, বইটি অন্তত নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখা হবে। তাই বইটি কিনলাম এবং আগাগোড়া পড়ে ফেললাম। ১৪২ পৃষ্ঠার এই বইয়েও পক্ষপাতদুষ্ট এবং জেনারেল মঞ্জুরকে নির্দোষ প্রমাণ এবং পরোক্ষভাবে জেনারেল এরশাদকে দায়ী করার প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়। আমি এ ব্যাপারে কোনো পক্ষে লিখবো না। না এরশাদের পক্ষে, না মঞ্জুরের পক্ষে। আমার ফোকাস ছিল কাদের ইন্ধনে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। এই হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর বিশ্লেষণ করলে যা দাঁড়ায়, সেটি আমি অতি সংক্ষেপে নির্মোহ দৃষ্টিতে বর্ণনা করছি।

॥দুই॥

১৯৮১ সালের ২৯ মে সকাল ১১টার দিকে প্রেসিডেন্ট জিয়া চট্টগ্রাম আগমন করেন। জিয়াকে প্রোটোকল মাফিক চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি মঞ্জুরের বিমানবন্দরে গিয়ে রিসিভ করার কথা। জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর লেখা থেকে জানা যায় যে, মঞ্জুর জিয়াকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ভিআইপি লাউঞ্জে যেতেন না। তিনি তার গাড়িতে বসে থাকতেন। কিন্তু ২৯ মে গ্যারিসন কমান্ডার মঞ্জুর বিমানবন্দরেই গেলেন না। তার জায়গায় পাঠালেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার আজিজকে। সার্কিট হাউজে আসার পথে রাস্তায় ট্রাফিক শৃঙ্খলার অভাব দেখে প্রেসিডেন্ট জিয়া বলেন, ‘মানুষ শৃঙ্খলা শিখবে কীভাবে? শুধু ৯ মাসের যুদ্ধে দেশ স্বাধীন হয়েছে। যদি ভিয়েতনামের মতো ২০ বছর যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হতো তাহলে বুঝতো স্বাধীনতার মর্যাদা।’

২৯ মে দিবাগত রাতের শেষ প্রহরে আনুমানিক রাত ৪টার সময় সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি গুলি করতে করতে সার্কিট হাউজে প্রবেশ করে। তারপর শোনা যায় ভারি বুটের আওয়াজ। কয়েকজন সেনা সদস্য সিঁড়ি বেয়ে প্রেসিডেন্টের রুমে ঢোকে। কিছুক্ষণ পর লে. ক. মাহফুজ টেলিফোনে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুদ্দিনকে জানান যে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান খুন হয়েছেন। সার্কিট হাউজের ভেতরে পড়েছিল চাদরে ঢাকা প্রেসিডেন্টের মৃতদেহ এবং গাড়ি বারান্দায় ছিল আরো দুটি মৃতদেহ। একটি ছিল পুলিশ কনস্টাবলের। আরেকটি প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের। আরো নিহত হয়েছেন প্রেসিডেন্টর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার লে. ক. আহসান। প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা করার আগে ঢাকার সাথে চট্টগ্রামের টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

এরপর চট্টগ্রাম রেডিওতে ঘোষণা করা হয় যে, দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। কিন্তু কে এই অভ্যুত্থানের নেতা সে সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তখনও ঢাকা রেডিও থেকে কিছু বলা হয়নি। ঢাকা রেডিও তাদের নিয়মিত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছিল। এরমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, এই হত্যাকাণ্ড চট্টগ্রাম গ্যারিসনের সেনারাই করেছে। চট্টগ্রাম বেতারের ঘোষণার পর চট্টগ্রামের রাজপথ প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ৩০ মে বেলা ১১টা থেকে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চট্টগ্রাম সেনানিবাসে মেজর জেনারেল মঞ্জুরের সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের বৈঠক হয়।

প্রেসিডেন্ট জিয়া এবং জেনারেল মঞ্জুর উভয়েই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং তাদের মধ্যে সম্পর্কও ছিল খুব ভালো। জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর পুস্তক অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে মঞ্জুর ছিলেন সিজিএস বা চিফ অব জেনারেল স্টাফ। তিনি আশা করেছিলেন যে, জিয়া প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করার পর জেনারেল মঞ্জুরকেই সেনাবাহিনীর প্রধান করবেন। কিন্তু জিয়া প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণ করার পর সেনাবাহিনীর প্রধানের পদে নিয়োগ দেন জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে। এতে জেনারেল মঞ্জুরের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আলোচ্য পুস্তকের লেখকের মতে, প্রেসিডেন্ট জিয়া মন্ত্রিসভা গঠনের পর তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে তার দলের নেতৃবৃন্দ এবং মন্ত্রীদের মধ্যে যারা তখন চট্টগ্রামে থাকতেন তারা বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকতেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী জামাল উদ্দিন। প্রতিবার মঞ্জুর বিমানবন্দরে গেলেও বিমানবন্দরের ভিআইপি রুমে না বসে গাড়িতে বসে থাকতেন। প্রশ্ন করলে বলতেন, ‘আমি এসব বাজে লোকের (অর্থাৎ রাজনৈতিক লোকদের) সঙ্গে বসতে চাই না।’

॥তিন॥

চট্টগ্রামের ডিসি এবং কমিশনার যে গাড়িতে করে মঞ্জুরের সাথে মিটিংয়ের জন্য যাচ্ছিলেন সেই গাড়িতে একজন মেজরও ছিলেন। সেই মেজর কথা প্রসঙ্গে বলেন যে, এখন আর ভয়ের কিছু নাই। সমস্ত পরিস্থিতি মেজর জেনারেল মঞ্জুরের নিয়ন্ত্রণে। ঐদিকে চট্টগ্রাম বেতার থেকে ক্রমাগত ঘোষণা করা হতে থাকে যে, দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। কিন্তু বাস্তবে চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের আর কোনো সেনানিবাসে অভ্যুত্থানের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এমনকি চট্টগ্রাম সেনানিবাসেও কোনো আলামত ছিল না। বরং প্রেসিডেন্ট জিয়ার নৃশংস হত্যাকাণ্ডে গুটি কয়েক অফিসার ছাড়া সর্বশ্রেণীর অফিসার এবং সেনা সদস্য হয়ে পড়েন স্তম্ভিত এবং দুঃখিত। ঠিক এই পর্যায়ে ঢাকা রেডিও থেকে উপ-রাষ্ট্রপ্রধান বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ভাষণ দেন। তিনি বলেন, এই বিদ্রোহ থামাতে সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বিদ্রোহীদেরকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন এবং বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলে তার ভাষণ শেষ করেন।

সিভিল ও মিলিটারি অফিসারদের কমবাইন্ড সভায় জেনারেল মঞ্জুর বক্তৃতা করেন। তিনি ভূতপূর্ব সরকার (জেনারেল জিয়া ও বিচারপতি সাত্তারের সরকার) ও জেনারেল এরশাদের দুর্নীতির সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি দেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার নির্মম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তিনি মাত্র একটি বাক্য উচ্চারণ করেন। বলেন, দুঃখের বিষয় এই বিদ্রোহে প্রেসিডেন্ট প্রাণ হারিয়েছেন। জিয়াউদ্দিন চৌধুরী (চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক) তার বইয়ের ২৮ পৃষ্ঠায় মঞ্জুরের বক্তৃতা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘আজ এই দুর্নীতিপরায়ন সরকারকে উৎখাত করে দেশপ্রেমিক সরকার গঠনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রয়োজন। তাই আজ থেকে দেশে নতুন সরকার শাসনভার গ্রহণ করেছে একটি বিপ্লবী পরিষদের মাধ্যমে। তিনি বারবার বিপ্লবী সরকারের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু এই বিপ্লবে কে বা কারা নেতৃত্ব দিচ্ছে সে বিষয়ে নীরব থাকেন।’

শুধু বলেন যে, তিনি এই বিপ্লবী সরকারের মুখপাত্র। তিনি নির্দেশ দেন (১) চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কোনো আমদানিকৃত পণ্য চট্টগ্রামের বাইরে যেতে পারবে না। (২) চট্টগ্রাম থেকে বাইরের সঙ্গে সড়ক, রেল, বিমান, নৌ পথ সহ সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ থাকবে। ঢাকা থেকে এই বিপ্লবী সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা বলবৎ থাকবে। চট্টগ্রামের ডিসি আলোচ্য পুস্তকের ২৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘আমি সবচেয়ে আশ্চর্য হচ্ছিলাম একথা ভেবে যে, মঞ্জুরের মতো একজন বিচক্ষণ লোক কীভাবে এ ধরনের উদ্ভট আদেশ দিতে পারেন!’ মঞ্জুর ডিসিকে বললেন যে পরদিন অর্থাৎ ৩১ মে তিনি কোর্ট বিল্ডিংয়ে ডিসির অফিসে আসবেন এবং সিভিলিয়ান অফিসারদের সাথে বৈঠক করবেন।

॥চার॥

সেনানিবাসের সভা শেষে মঞ্জুর একটি অদ্ভুত কাজ করেন। দরজার সামনে একটি টেবিলে পবিত্র কোরআন রক্ষিত ছিল। তিনি সভায় উপস্থিত সকলকে এই মর্মে নির্দেশ দেন, ‘আপনারা যাওয়ার আগে কোরআন স্পর্শ করে বিপ্লবী সরকারের পক্ষে শপথ করে যাবেন’।

প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হয়েছেন, এই খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের সর্বশ্রেণীর মানুষ ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের মধ্যেও সাধারণ সৈনিকরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। মঞ্জুর ডিসি জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে বলেন, ‘কি মিয়া, ভয় পাইছো? চিন্তা নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ ডিসি অফিসের মিটিং শেষে যখন মঞ্জুর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলেন তখন সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞেস করেন, এই বিপ্লবী সরকারে আর কারা আছে? মঞ্জুর প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। এরমধ্যে একজন সেনা অফিসার তাকে কানে কানে কিছু বলেন। এই কানে কানে কথার পর মঞ্জুর প্রথমে গম্ভীর, অতঃপর বিমর্ষ হয়ে পড়েন। আসলে ঐ অফিসার মঞ্জুরকে জানান যে, খোদ চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট নিহত প্রেসিডেন্ট জিয়ার পক্ষে সৈনিকরা কথাবার্তা বলছে। আরো খবর আসে যে, চট্টগ্রামের বিদ্রোহ দমন করার জন্য কুমিল্লা থেকে একদল পদাতিক সৈন্য চট্টগ্রামের দিকে রওয়ানা হয়েছে।

১ জুন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ঘুরে যায়। চট্টগ্রামের বেতারকেন্দ্র, টেলিভিশন ভবন এবং টেলিফোন ভবন থেকে সেনারা সরে যায়। রাত ১১টার পর টেলিফোনের আওয়াজে ডিসির ঘুম ভেঙ্গে যায়। টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ বলেন, ‘ডিসি সাহেব, বিদ্রোহ দমন করা হয়েছে। বিদ্রোহীরা সব পালিয়ে গেছে।’ উল্লেখ্য, ব্রিগেডিয়ার হান্নান তখন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। লালদীঘি ময়দানে গায়েবি জানাযার ব্যবস্থা হয়। হাজার হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ লোক সেই জানাযায় শামিল হয়। আর ঐদিকে জেনারেল মঞ্জুর তার স্ত্রী রানা মঞ্জুর এবং তার ৪ সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান এবং ফটিকছড়ি অভিমুখে রওয়ানা হন। আলোচ্য বইয়ের লেখক প্রশ্ন করেছেন যে, এত জায়গা থাকতে মঞ্জুর ফটিকছড়ি যাচ্ছেন কেন? চকিতে তার মনে হলো, ফটিকছড়ি দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে যাওয়া সহজ হয়।

॥পাঁচ॥

মঞ্জুরের আর ফটিকছড়ি যাওয়া হয় না। মাঝ পথেই পুলিশ ইনসপেক্টর কুদ্দুস তাকে সপরিবারে গ্রেফতার করেন। মঞ্জুরের ওপর ক্রুদ্ধ একদল সেনা সদস্য একজন অফিসারের নেতৃত্বে কুদ্দুসের হাত থেকে মঞ্জুরকে ছিনিয়ে নেন এবং ঐ সেনা সদস্যরা মঞ্জুরকে হত্যা করেন বলে জিয়া উদ্দিন এম চৌধুরীর পুস্তকের ৪৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে।

এই হলো চট্টগ্রামের ব্যর্থ বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত কাহিনী। এরপর ঐ পুস্তকের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে, মঞ্জুর জিয়াকে হত্যা করার নির্দেশ দেননি। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে মেরে ফেলে দেওয়ার নেপথ্য নায়ক নাকি ছিলেন জেনারেল এরশাদ। তিনি তখন ছিলেন সেনাপ্রধান। কিন্তু মঞ্জুর হত্যায় এরশাদের সংশ্লিষ্টতার কোনো অকাট্য প্রমাণ এই বই এবং সেই সাথে এ সম্পর্কিত যত লেখালেখি হয়েছে তার কোথাও দেওয়া হয়নি। আলোচ্য পুস্তক এবং ইতোপূর্বে যেসব লেখালেখি হয়েছে সেগুলোতে বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে, চট্টগ্রামে জেনারেল জিয়াকে হত্যা করার কারণ হলো, পাকিস্তান ফেরত সেনা সদস্য এবং মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের ভেতরে চলতে থাকা সুপ্ত রেষারেষির ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, জিয়ার চেয়ে বড় আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা কে আছে? তাহলে তাকে হত্যা করা হলো কেন এবং কে ও কারা করল? ওপরে বর্ণিত ঘটনাবলী, আমার মনে হয়, এসম্পর্কিত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে এবং রহস্যের যবনিকা নামিয়েছে।


লেখক : মোবায়েদুর রহমান, লেখক, বিশিষ্ট কলামিস্ট।

এই কুইজে


- জন
অংশগ্রহণ করেছেন
আপনিও রেজিষ্ট্রেশন করুন


ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধু

ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধু

১৪ আগস্ট ২০২০

আজ আপনার জন্য আর কোন পরীক্ষা নেই!

শিরোনাম:
   নিজের সন্তানের প্রতি বাবার লেখা খোলা চিঠি!        ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র        ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগ।        ইমরান খানের প্রশ্ন” কে ছিলো প্রকৃত বিশ্বাসঘাতক ? ইয়াহিয়া না’কি শেখ মুজিব।        চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনা অফিসারের অভ্যুত্থান, নাকি হত্যাকাণ্ড?        র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) নতুন দায়িত্বে ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশীদ।        কৃষি শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি        এপ্রিল মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২০৪ কোটি ডলার        তীব্র তাপপ্রবাহে ডিহাইড্রেশন, হিট স্ট্রোক, মাথা ধরা, পেটের অসুখের প্রতিকার এই চার খাবারে        গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন আহত।        হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তি        দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পরামর্শ        চাঁদার না দেয়ায় প্রবাসী ব্যাবসায়ী ও পরিবারের উপর হামলার অভিযোগ        শরীরে পানির অভাবে বাড়তে পারে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি।        টন বলতে এসির সাইজ বা ওজনকে বোঝায় না।