ফাইল ফটো
বাংলাদেশে ২০০৮ সাল থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া শুরু হয়। নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্র বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে এখন প্রায় এগারো কোটি মানুষের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।
এই পরিচয়পত্রে বিভিন্ন রকম ভুলের অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেক জানেন না; কি করতে হবে। সহজেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান না। অনেক ভুলের জন্য নানা রকম হয়রানীতে পড়তে হয় ভুক্তভোগীদের। তবে বিভিন্ন ভুল সমাধানের উপায়ও বলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সারাদিন ডট নিউজের পাঠকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানাব।
প্রশ্ন: একটি এনআইডি কতবার সংশোধন করা যায়?
উত্তর: এক তথ্য শুধুমাত্র একবার সংশোধন করা যাবে। তবে যুক্তিযুক্ত না হলে কোনো সংশোধন গ্রহণযোগ্য হবে না।
প্রশ্ন: আমার জন্ম তারিখ যথাযথভাবে লেখা হয়নি, আমার কাছে প্রামাণিক কোনো দলিল নেই, কীভাবে সংশোধন করা যাবে?
উত্তর: সংশ্লিষ্ট উপজেলা/জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রশ্ন: কার্ডের তথ্য কিভাবে সংশোধন করা যায়?
উত্তর: এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। সংশোধনের পক্ষে পর্যাপ্ত উপযুক্ত দলিলাদি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
প্রশ্ন: ভুলক্রমে পিতা/স্বামী/মাতাকে মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হলে সংশোধনের জন্য কি কি সনদ দাখিল করতে হবে?
উত্তর: জীবিত বাবা/স্বামী/মাকে ভুলক্রমে মৃত হিসেবে উল্লেখ করার কারণে পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে।
প্রশ্ন: আমি অবিবাহিত। আমার কার্ডে বাবা না লিখে স্বামী লেখা হয়েছে। কীভাবে তা সংশোধন করা যাবে?
উত্তর: সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে আপনি বিবাহিত নন মর্মে প্রমাণাদিসহ আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন: বিয়ের পর স্বামীর নাম সংযোজনের প্রক্রিয়া কি?
উত্তর: নিকাহনামা ও স্বামীর আইডি কার্ড এর ফটোকপি সংযুক্ত করে NID Registration Wing/ সংশ্লিষ্ট উপজেলা/ থানা/ জেলা নির্বাচন অফিস বরাবর আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন: বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখন ID Card থেকে স্বামীর নাম বিভাবে বাদ দিতে হবে?
উত্তর: বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত দলিল (তালাকনামা) সংযুক্ত করে NID Registration Wing/সংশ্লিষ্ট উপজেলা/ থানা/ জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন: বিবাহ বিচ্ছেদের পর নতুন বিবাহ করেছি এখন আগের স্বামীর নামের স্থলে বর্তমান স্বামীর নাম কীভাবে সংযুক্ত করতে পারি?
উত্তর: প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের তালাকনামা ও পরবর্তী বিয়ে কাবিননামাসহ সংশোধন ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন: আমি আমার পেশা পরিবর্তন করতে চাই কিন্তু কিভাবে করতে পারি?
উত্তর: এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/জেলা নির্বাচন অফিসে প্রামাণিক কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। উলেখ্য, আইডি কার্ডে এ তথ্য মুদ্রণ করা হয় না।
প্রশ্ন: আমার ID Card এর ছবি অস্পষ্ট, ছবি পরিবর্তন করতে হলে কি করা দরকার?
উত্তর: এক্ষেত্রে নিজে সরাসরি উপস্থিত হয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন: নিজ/বাবা/স্বামী/মায়ের নামের বানান সংশোধন করতে আবেদনের সঙ্গে কি কি দলিল জমা দিতে হবে?
উত্তর: এসএসসি/সমমান সনদ, জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সদন, চাকরির প্রমাণপত্র, নিকাহ্নামা, বাবা/স্বামী/মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হয়।
প্রশ্ন: নিজের ডাক নাম বা অন্য নামে নিবন্ধিত হলে সংশোধনের জন্য আবেদনের সঙ্গে কী কী দলিল জমা দিতে হবে?
উত্তর: এসএসসি/সমমান সনদ, বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী/ স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, ম্যাজিট্রেট কোর্টে সম্পাদিত এফিডেভিট ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, ওয়ারিশ সনদ, ইউনিয়ন/পৌর বা সিটি করপোরেশন হতে আপনার নাম সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র।
প্রশ্ন: পিতা/মাতাকে ‘মৃত’উল্লেখ করতে চাইলে কী কী সনদ দাখিল করতে হয়?
উত্তর: বাবা/মা/স্বামী মৃত উল্লেখ করতে চাইলে মৃত সনদ দাখিল করতে হবে।
প্রশ্ন: ঠিকানা কীভাবে পরিবর্তন/ সংশোধন করা যায়?
উত্তর: শুধুমাত্র আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণেই ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য বর্তমানে যে এলাকায় বসবাস করছেন সেই এলাকার উপজেলা/ থানা নির্বাচন অফিসে ফর্ম ১৩ এর মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। তবে একই ভোটার এলাকার মধ্যে পরিবর্তন বা ঠিকানার তথ্য বা বানানগত কোনো ভুল থাকলে সাধারণ সংশোধনের আবেদন ফরমে আবেদন করে সংশোধন করা যাবে।
প্রশ্ন: আমি বৃদ্ধ ও অত্যন্ত দরিদ্র ফলে বয়স্ক ভাতা বা অন্য কোনো ভাতা খুব প্রয়োজন। কিন্তু নির্দিষ্ট বয়স না হওয়ার ফলে কোনো সরকারি সুবিধা পাচ্ছি না। লোকে বলে ID Card –এ বয়সটা বাড়ালে ওই সব ভাতা পাওয়া যাবে?
উত্তর: ID Card এ প্রদত্ত বয়স প্রামাণিক দলিল ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, প্রামাণিক দলিল তদন্ত ও পরীক্ষা করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
প্রশ্ন: একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের কার্ডে বাবা/মায়ের নাম বিভিন্নভাবে লেখা হয়েছে কীভাবে তা সংশোধন করা যায়?
উত্তর: সবার কার্ডের কপি ও সম্পর্কের বিবরণ দিয়ে NID Registration Wing/ উপজেলা/ জেলা নির্বাচন অফিস বরাবর পর্যাপ্ত প্রামাণিক দলিলসহ আবেদন করতে হবে।
প্রশ্ন: আমি পাস না করেও অজ্ঞতাবশত শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তদুর্ধ্ব লিখেছিলাম এখন আমার বয়স বা অন্যান্য তথ্যাদি সংশোধনের উপায় কী?
উত্তর: আপনি ম্যাজিট্রেট আদালতে এসএসসি পাস করেননি, ভুলক্রমে লিখেছিলেন মর্মে হলফনামা করে এর কপিসহ সংশোধনের আবেদন করলে তা সংশোধন করা যাবে।
প্রশ্ন: ID Card এ অন্য ব্যক্তির তথ্য চলে এসেছে। এ ভুল কীভাবে সংশোধন করা যাবে?
উত্তর: ভুল তথ্যের সংশোধনের পক্ষে পর্যাপ্ত দলিল উপস্থাপন করে NID Registration Wing/সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক যাচাই করার পর সঠিক পাওয়া গেলে সংশোধনের প্রক্রিয়া করা হবে।
প্রশ্ন: রক্তের গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত বা সংশোধনের জন্য কী করতে হয়?
উত্তর: রক্তের গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত বা সংশোধন করতে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়করা ডায়াগনোসটিক রিপোর্ট দাখিল করতে হয়।
প্রশ্ন: বয়স/ জন্ম তারিখ পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া কী?
উত্তর: এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সনদের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এসএসসি বা সমমানের সনদ প্রাপ্ত না হয়ে থাকলে সঠিক বয়সের পক্ষে সব দলিল উপস্থাপন করে আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনে ডাক্তারি পরীক্ষা সাপেক্ষে সঠিক নির্ধারণ করে সংশোধন করা হবে।
প্রশ্ন: স্বাক্ষর পরিবর্তন করতে চাই, কীভাবে করতে পারি?
উত্তর: নতুন স্বাক্ষরের নমুনাসহ গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র সংযুক্ত করে আবেদন করতে হবে। তবে স্বাক্ষর একবারই পরিবর্তন করা যাবে।
প্রশ্ন: কার্ডে কোন সংশোধন করা হলে তার কি কোন রেকর্ড রাখা হবে?
উত্তর: সব সংশোধনের রেকর্ড সেন্ট্রাল ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে।
প্রশ্ন: ইন্টারনেট না থাকলে-কি করব; কোথায় গিয়ে ঠিক করাতে পারি?
উত্তর: বাংলাদেশে সবার ইন্টারনেট ব্যাবহারের সামর্থ্য নেই। তাদের জন্য দেশের প্রতিটি উপজেলায় নির্বাচন অফিস রয়েছে।
সেখানে দুইজন করে ‘ডাটা এন্ট্রি অপারেটর’ রয়েছে। তারাই সবধরনের ডাটা এন্ট্রিতে সহযোগিতা করবেন। তাদের সেভাবে বলা আছে। এটা পুরোটাই বিনামূল্যে করবেন তারা। তথ্যসূত্র: নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট
সূত্র : সারাদিন নিউজ।